ঢাকা , সোমবার, ০৩ মার্চ ২০২৫ , ১৯ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

​কিশোরগঞ্জে বেড়েছে মিষ্টি কুমড়ার চাষ, বাড়েনি দাম

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ০২-০৩-২০২৫ ০৫:০০:৪১ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ০২-০৩-২০২৫ ০৫:০০:৪১ অপরাহ্ন
​কিশোরগঞ্জে বেড়েছে মিষ্টি কুমড়ার চাষ, বাড়েনি দাম ​ছবি: সংগৃহীত
কিশোরগঞ্জে মিষ্টি কুমড়া চাষ করে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। একদিকে যেমন ফলন কম; তেমনই চাষাবাদের খরচের সাথে মিলছে না বিক্রি দামের হিসাব। স্থানীয় বাজার বা পাইকারি বিক্রি করতে গেলে প্রতি কেজি মিষ্টি কুমড়া আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬ থেকে ১০ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানি বেশি থাকায় এ বছর বাজারে দামের প্রভাব পড়েছে। গত বছর জেলায় ১ হাজার ৫ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ হলেও এ বছরে জেলায় ১ হাজার ২১৬ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে মিষ্টি কুমড়া। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৫ হাজার মেট্রিক টন।

জানা গেছে, তাড়াইল ও ইটনা উপজেলায় মিষ্টি কুমড়ার আবাদ বেশি হয়েছে। তার মধ্যে তাড়াইলে ৩০০ হেক্টর ও ইটনায় ২৫০ হেক্টর জমি। চাষাবাদ বেশি হলেও ফলন হয়নি আশানুরূপ। বিস্তীর্ণ এ হাওরে প্রতি বছর এ সময়ে জমির প্রায় ৬০ ভাগ কুমড়া বিক্রি হয়ে যায়। কিন্তু এ বছর বিক্রি হয়নি। সাধারণত গ্রীষ্মকালীন ফসলের জন্য অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মিষ্টি কুমড়ার বীজ বপন করা হয়।

কৃষকেরা বলছেন, মিষ্টি কুমড়া এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি বছর যেখানে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে কুমড়া বিক্রি করা হতো; সেখানে এ বছর ৬ থেকে ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আগের চেয়ে বেশি দামে সার, ডিজেল, কীটনাশক কিনতে হয়েছে। একই সাথে শ্রমিকের দামও বেড়ে যাওয়ায় চাষাবাদের খরচ ওঠানোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। তবে জেলার খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মিষ্টি কুমড়া বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা।

প্রতিদিন হাওরের বিভিন্ন উপজেলা থেকে নৌকায় করে ইটনা উপজেলার রায়টুটি ইউনিয়নের শান্তিপুর হাটে মিষ্টি কুমড়া নিয়ে আসেন কৃষকেরা। এখান থেকে পাইকারদের মাধ্যমে ঢাকা, যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, ফরিদপুর, পাবনা, চুয়াডাঙ্গা, পাইকগাছা, বেনাপোলসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে যায়। যেখানে প্রতি হাটে প্রতিদিন কোটি টাকার বেশি মিষ্টি কুমড়া বিক্রি হতো; সেখানে এ বছর গড়ে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা বিক্রি হয়।

ইটনা উপজেলার রায়টুটি ইউনিয়নের কৃষক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ইটনা-মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলার তিনটি হাওরে ১ হাজার ২০০ কাঠা জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করেছি। এই চাষে খরচ হয়েছে ৫৬ লাখ টাকা। এখন যে দাম আছে; সেই দামে খরচ পুষিয়ে ওঠা বড় চ্যালেঞ্জ। তাছাড়া জমিগুলোতে ১৫ জন কর্মচারী কাজ করে। তাদের প্রত্যেকের মাসিক বেতন ১৫ হাজার টাকা। ফলন কমের পাশাপাশি দাম নিয়ে বিপাকে আছি।’

কৃষক রইছ মিয়া বলেন, ‘২২০ কাঠা জমি চাষ করেছি। গাছে ফলনও কম, দামও কম। সাড়ে ১৪ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। খরচ তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। আমি একা না, এলাকায় যারা মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছেন; সবার একই অবস্থা। আশা করেছিলাম ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি বিক্রি করবো, সেখানে ১০ টাকা কেজি বিক্রি করায় কষ্ট হচ্ছে।’

ব্যবসায়ী ও কৃষক জুম্মন বলেন, ‘আমার মাঠে ২০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এ বছর ৫ লাখ টাকাও আশা করতে পারছি না। এরকম ভাবে সব কৃষকের একই অবস্থা। কীটনাশক ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা হয়েছে। সার ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা। শ্রমিকের মজুরি ৫০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা এ বছর। এই ফসল করে অনেক কৃষক হতাশায় আছেন। অন্য বছর যেখানে লাখ লাখ টাকা আয় হতো সেখানে এইবার লোকসান।’

স্থানীয় ব্যবসায়ী আড়তদার উমর ফারুক বলেন, ‘প্রতিদিন আমার আড়ৎ থেকে ৭৫ টনের মতো মিষ্টি কুমড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হয়। গত বছর সর্বনিম্ন ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এ বছর প্রথম বাজার শুরু হয়েছে ১৭ টাকা কেজি। এখন ৬ থেকে ১০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আমদানি বেশি থাকায় বাজারদর কমে গেছে। এই হাটে ইটনা, কালিয়াজুড়ি এলাকা থেকে মিষ্টি কুমড়া বেশি আসে।’

যশোর থেকে আসা পাইকার সবুজ মিয়া বলেন, ‘এখান থেকে প্রতিদিন মাঠ ও ঘাট থেকে মিষ্টি কুমড়া কিনে থাকি। প্রতিদিন ১৫ টনের ৪ গাড়ি কুমড়া কিনে নিয়ে যায়। লাভ খুব বেশি না। ২০ বছর যাবত ব্যবসাটা করে আসছি। দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করি। আমরা এ বছর কৃষকের কাছ থেকে সর্বোচ্চ ১০ টাকা কেজি দরে কিনে নিচ্ছি। বিক্রি করছি ১৪ থেকে ১৫ টাকা। আমরা বাজারে যেমন দামে বিক্রি করবো; কৃষকের ওপর তেমন প্রভাব পড়বে। আমরা বেশি দামে বিক্রি করতে না পারলে কৃষকের কাছ থেকে বেশি দামে কিনতেও পারবো না। এ বছর মিষ্টি কুমড়ার আমদানি বেশি।’

কিশোরগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. ইমরুল কায়েস বলেন, ‘এ বছর জেলায় ১ হাজার ২১৬ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়া আবাদ হলেও কৃষকেরা মিষ্টি কুমড়ার ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। অন্যান্য সবজি উৎপাদন বেশি থাকায় কমেছে দাম। এ ছাড়া অন্য বছর বিভিন্ন জুস কোম্পানি মিষ্টি কুমড়া কিনে নিলেও এ বছর এখনো কোনো কোম্পানির দেখা মেলেনি। তারা কিনলে কৃষক মূল্য বেশি পাবে।’

এদিকে মাঠ পর্যায়ে কৃষকেরা ন্যায্যমূল্য না পেলেও কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের বাজারগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি মিষ্টি কুমড়া বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা।

 
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন/এসকে


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ